ঢাকা ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নওগাঁর গ্রামীণ চাষাবাদে অভিন্ন দৃশ্যপট

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩ ২১৪ বার পড়া হয়েছে

গ্রাম বাংলার এতিহ্য গরু-লাঙ্গলের সাথে কৃষকের এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খুব সকালে গোয়াল থেকে গরু বের করে গরুর মুখের সামনে খাবার দেওয়া হয়,খাবার শেষ করে লাগাম লাগিয়ে গরুকে প্রস্তুত করা হয় হালচাষে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কৃষক ভোরে সামান্য কিছু খেয়ে গরু নিয়ে রওনা দেয় কাঙ্খিত জমির উদ্দেশ্যে। যে গরুগুলো দিয়ে হাল চাষ করা হয় গ্রাম্য ভাষায় সেটাকে ” হালের গরু বলে”। প্রতি গ্রামে দুই-একজনের হালের গরু থাকে,হালচাষের আগেরদিন কৃষকেরা তারিখ ও মূল্যে ঠিক করে যায় গরুর মালিকের কাছে।মূল্যে ঠিক হলে ঠিক পড়ের দিন সকালে জমিতে হাজির হয় হালের গরু ও তার মালিক।আলু তোলা শেষ হলে কিছুদিন পড়েই হালচাষের প্রয়োজন পড়ে।

ভোরে শুরু হয় হালচাষ, বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর লাঙ্গলের চারপাশে হরেক রকম পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্ষেত। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা মিলে ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়ের,কারো হাতে ব্যাগ কারো হাতে পাতিল আবার কারো হাতে দেখা মিলে বেতের তৈরি কাঠা। মূলত তারা লাঙ্গলের পেছনে পেছনে থেকে মাটির নিচে ছাড়া পড়া আলু কুড়াতে এসেছে। বেলা বাড়লে তারা চলে যায় বাড়িতে কারন তাদের আবার স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার ছোট্ট শিশুরা আলু কুড়ানোর জন্য সেখানে থেকে যেতে চায় না, কিন্তু তাদের মা এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। তারা বড় হওয়ার পড়ে এ দৃশ্য স্মৃতিচারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে।

নওগাঁর আঞ্চলিক ভাষায়,”হাল বোয়া” বা যে হাল চাষ করে নেয় তাকে সকালের খাবার দিতে হয় সেজন্য গেরস্তের বাড়ি থেকে কেউ একজন গামছায় বেঁধে গামলা ভর্তি পান্তা, লবণ ও সাথে কিছু তরকারি অথবা আলুর ভর্তা দিয়ে যায়। খাওয়া শেষ হওয়া অব্ধি অপেক্ষা করে গেরস্তের বাড়ি থেকে আসা কেউ একজন সেগুলো নিয়ে চলে যায়। প্রায় দুপুরের আগেই হালচাষ শেষ হয়ে যায় বা আরেকটু দেরিতে। গেরস্তের বাড়িতে দুপুরের খাবার শেষ করে কিছু চাল নিয়ে রওনা দেয় নিজের বাড়ি। যে চাল গরুর মালিককে দেয়া হয় সেটিকে আঞ্চলিক ভাষায় ” সিদা ” বলে। এভাবে গরু দিয়ে হালচাষ করে সংসার চলে গরুর মালিক সেই কৃষকের।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ কারন কৃষি প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটার ফলে নিমিষেই কয়েক বিঘা জমি চাষ দেয়া শেষ হয়ে যায়। স্মৃতিতেই থাকবে গ্রামবাংলার চিরচেনা এই দৃশ্যটি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁর গ্রামীণ চাষাবাদে অভিন্ন দৃশ্যপট

আপডেট সময় : ০৫:৫৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩

গ্রাম বাংলার এতিহ্য গরু-লাঙ্গলের সাথে কৃষকের এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খুব সকালে গোয়াল থেকে গরু বের করে গরুর মুখের সামনে খাবার দেওয়া হয়,খাবার শেষ করে লাগাম লাগিয়ে গরুকে প্রস্তুত করা হয় হালচাষে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কৃষক ভোরে সামান্য কিছু খেয়ে গরু নিয়ে রওনা দেয় কাঙ্খিত জমির উদ্দেশ্যে। যে গরুগুলো দিয়ে হাল চাষ করা হয় গ্রাম্য ভাষায় সেটাকে ” হালের গরু বলে”। প্রতি গ্রামে দুই-একজনের হালের গরু থাকে,হালচাষের আগেরদিন কৃষকেরা তারিখ ও মূল্যে ঠিক করে যায় গরুর মালিকের কাছে।মূল্যে ঠিক হলে ঠিক পড়ের দিন সকালে জমিতে হাজির হয় হালের গরু ও তার মালিক।আলু তোলা শেষ হলে কিছুদিন পড়েই হালচাষের প্রয়োজন পড়ে।

ভোরে শুরু হয় হালচাষ, বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর লাঙ্গলের চারপাশে হরেক রকম পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্ষেত। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা মিলে ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়ের,কারো হাতে ব্যাগ কারো হাতে পাতিল আবার কারো হাতে দেখা মিলে বেতের তৈরি কাঠা। মূলত তারা লাঙ্গলের পেছনে পেছনে থেকে মাটির নিচে ছাড়া পড়া আলু কুড়াতে এসেছে। বেলা বাড়লে তারা চলে যায় বাড়িতে কারন তাদের আবার স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার ছোট্ট শিশুরা আলু কুড়ানোর জন্য সেখানে থেকে যেতে চায় না, কিন্তু তাদের মা এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। তারা বড় হওয়ার পড়ে এ দৃশ্য স্মৃতিচারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে।

নওগাঁর আঞ্চলিক ভাষায়,”হাল বোয়া” বা যে হাল চাষ করে নেয় তাকে সকালের খাবার দিতে হয় সেজন্য গেরস্তের বাড়ি থেকে কেউ একজন গামছায় বেঁধে গামলা ভর্তি পান্তা, লবণ ও সাথে কিছু তরকারি অথবা আলুর ভর্তা দিয়ে যায়। খাওয়া শেষ হওয়া অব্ধি অপেক্ষা করে গেরস্তের বাড়ি থেকে আসা কেউ একজন সেগুলো নিয়ে চলে যায়। প্রায় দুপুরের আগেই হালচাষ শেষ হয়ে যায় বা আরেকটু দেরিতে। গেরস্তের বাড়িতে দুপুরের খাবার শেষ করে কিছু চাল নিয়ে রওনা দেয় নিজের বাড়ি। যে চাল গরুর মালিককে দেয়া হয় সেটিকে আঞ্চলিক ভাষায় ” সিদা ” বলে। এভাবে গরু দিয়ে হালচাষ করে সংসার চলে গরুর মালিক সেই কৃষকের।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ কারন কৃষি প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটার ফলে নিমিষেই কয়েক বিঘা জমি চাষ দেয়া শেষ হয়ে যায়। স্মৃতিতেই থাকবে গ্রামবাংলার চিরচেনা এই দৃশ্যটি